বিসমিল্লাহ এবং তাসমিয়াহ । পার্থক্য ও ব্যবহার ।

Posted by Akash on Friday, April 5, 2024

بسم اللہ الرّحمٰن الرّحیم

আল্লাহ তাআ’লা বলেন - 

تَبَـٰرَكَ ٱسْمُ رَبِّكَ ذِى ٱلْجَلَـٰلِ وَٱلْإِكْرَامِ

কত বরকতময় আপনার রবের নাম যিনি মহিমাময় ও মহানুভব (আর রাহমান ৭৮)

আবুল মালীহ (রহঃ) হতে এক ব্যক্তির সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জন্তুযানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে বসা ছিলাম। হঠাৎ তাঁর সাওয়ারী হোঁচট খেলে আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হয়েছে। তিনি বললেন, একথা বলো না যে, শয়তান ধ্বংস হয়েছে। কেননা তুমি একথা বললে সে অহংকারে ঘরের মতো বড় আকৃতির হয়ে যাবে এবং সে বলবে, আমার ক্ষমতায় হয়েছে। অতএব বলো, আল্লাহর নামে। যখন তুমি ’আল্লাহর নামে’ বলবে তখন শয়তান হ্রাসপ্রাপ্ত হয়ে মাছির মত হয়ে যাবে (আবু দাউদ ৪৯৮২) 

সুতরাং প্রত্যেক ভালো কাজের পূর্বে আল্লাহর নাম নেওয়া ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ।

তাসমিয়াহ হচ্ছে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

তাসমিয়াহর ব্যবহার

  • কুরআন পাঠ করার পূর্বে 
  • রাব্বুল আলামিন বলেন

    ٱقْرَأْ بِٱسْمِ رَبِّكَ ٱلَّذِى خَلَقَ

    পড়ুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন (আলাক ১)

  • কোন চিঠি , ইমেইল , পোস্ট এর শুরুতে
  • সাবধানতা -অনেকেই তাসমিয়াহর বদলে ৭৮৬ লিখেন, কিন্তু এইতা একটি সম্পূর্ণ ভুল কাজ , যা নবী (ছাঃ) কখনো করেননি । 

  • কোন চুক্তি কিংবা ডকুমেন্ট এর শুরুতে
  • এইতা প্রমানিত বিষয় যে রাসুল (ছাঃ) হুদাইবিয়ার সন্ধি তাসমিয়াহ দিয়ে শুরু করেন । 

    বিসমিল্লাহ্‌র ব্যবহার -

    প্রতিটি ভালো কাজের পূর্বেই বিসমিল্লাহ বলা উচিৎ । নিচে রাসুল (ছঃ) থেকে প্রমানিত কিছু উদাহারন দেওয়া হল । 

  • খাওয়ার পূর্বে -
  • উমার ইবনু আবূ সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ছোট ছেলে অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে ছিলাম। খাবার বাসনে আমার হাত ছুটাছুটি করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ হে বৎস! বিসমিল্লাহ বলে ডান হাতে আহার কর এবং তোমার কাছের থেকে খাও। এরপর থেকে আমি সব সময় এ নিয়মেই খাদ্য গ্রহণ করতাম। যার যার কাছের থেকে আহার করা। (বুখারী ৫৩৭৬)

    যদি বলতে ভুলে যায় তাহলে

    আইশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কোন ব্যক্তি খাওয়া শুরু করে তখন যেন সে বিসমিল্লাহি বলে। সে খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে তবে যেন বলে, “বিসমিল্লাহ ফী আওয়ালিহি ওয়া আখিরহু” (এর শুরু ও শেষ আল্লাহ তা’আলার নামে)। (তিরমিযী ১৮৫৮)

  • পান করার পূর্বে ।
  • সহিহ বুখারীর ৬৪৫২ নঃ হাদিছে স্পষ্ট ভাবে প্রমানিত যে তিনি পান করার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলতেন

  • অজু , গোসল , তায়াম্মুম করার পূর্বে , 
  • অজুর পূর্বে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নাহ ।

  • মসজিদে প্রবেশ করার পূর্বে ।
  • রাসুল ছাঃ মসজিদে প্রবেশের পূর্বে এই দোয়া পরতেন -

    بِسْمِ اللَّهِ وَالسَّلاَمُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي وَافْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

  • মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় ।
  • তিনি (ছঃ) এই দোয়া পরতেন

    بِسْمِ اللَّهِ وَالسَّلاَمُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي وَافْتَحْ لِي أَبْوَابَ فَضْلِكَ ‏

  • বাসায় প্রবেশের সময় । বের হওয়ার সময়
  • মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না আনাযী (রহঃ) ..... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, যখন কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশের এবং খাবার গ্রহণের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে, তখন শয়তান হতাশ হয়ে (তার সঙ্গীদের) বলে- তোমাদের (এখানে) রাত্রি যাপনও নেই, খাওয়াও নেই। আর যখন সে প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে আল্লাহর নাম স্মরণ না করে, তখন শয়তান বলে, তোমরা থাকার স্থান পেয়ে গেলে। আর যখন সে খাবারের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ না করে, তখন সে (শয়তান) বলে, তোমাদের নিশি যাপন ও রাতের খাওয়ার আয়োজন হলো (মুসলিম ২০১৮)

  • জবাই করার পূর্বে ।
  • আনাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ শিং বিশিষ্ট সাদা-কালো ধূসর রংয়ের দুটি দুম্বা স্বহস্তে যাবাহ করেন। (যাবাহ করার সময়) তিনি বিসমিল্লাহ-হ’ ও ’আল্লা-হু আকবার’* বলেন এবং (যবাহকালে) তার একখানা পা দুম্বা দুটির ঘাড়ের পাশে রাখেন (বুখারী ৪৯৮১)

  • সহবাসের পূর্বে । 
  • ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সাথে মিলনের পূর্বে যদি বলে, আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। আল্লাহ্! তুমি আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং যা আমাদেরকে দান করবে তাকেও শয়তান থেকে দূরে রাখ)- অতঃপর (এ মিলনের দ্বারা) তাদের কিসমতে কোন সন্তান থাকলে শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। ( বুখারী ১৪১)