ছোট বিদআত কখনো থামে না, বরং ধীরে ধীরে মানুষকে বিভ্রান্তি ও কুফরির দিকে ঠেলে দেয় – শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ

Posted by Shamil Basaiv on Thursday, March 6, 2025

ছোট বিদআত কিভাবে মানুষকে বড় বড় বিদআতে ঠেলে দেয় তার একটি স্পষ্ট উদাহরণ পাওয়া যায় সুনান আদ-দারিমী (১/৭৯)-তে বর্ণিত এক হাদিসে।
আমর ইবন সালামাহ (রহ.) বলেন: “আমরা ফজরের সালাতের আগে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের (রাঃ) দরজার সামনে বসতাম, যাতে তিনি বের হলে আমরা তার সাথে মসজিদে যেতে পারি। একদিন, আবু মুসা আশআরি (রাঃ) আমাদের কাছে এসে বললেন, ‘আবু আবদুর রহমান (ইবন মাসউদ) কি এখনো বের হননি?’ আমরা বললাম, ‘না।’ তাই তিনি আমাদের সাথে বসে রইলেন যতক্ষণ না তিনি বের হলেন। যখন তিনি বের হলেন, তখন আমরা সবাই তার সাথে উঠে দাঁড়ালাম। আবু মুসা (রাঃ) তাকে বললেন, ‘হে আবু আবদুর রহমান! আমি মসজিদে এমন কিছু দেখেছি, যা আমার দৃষ্টিতে খুব খারাপ লেগেছে, তবে আল্লাহর প্রশংসা, আমি সেখানে শুধু ভালো কাজই দেখেছি।’

ইবন মাসউদ (রাঃ) বললেন, ‘তা কী?’

আবু মুসা বললেন, ‘আপনি যদি বেঁচে থাকেন তবে দেখবেন। আমি মসজিদে কিছু লোককে দেখেছি যারা দলে দলে বসে নামাজের জন্য অপেক্ষা করছে। প্রত্যেক দলের সামনে কিছু কংকর রাখা আছে। তাদের মধ্যে একজন বলছে, “একশোবার আল্লাহু আকবার বলো।” তাই তারা একশোবার বলছে। তারপর সে বলছে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ একশোবার বলো।” তারা সেটাও বলছে। তারপর সে বলছে, “সুবহানাল্লাহ একশোবার বলো।” তারাও তাই করছে।’

ইবন মাসউদ (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি তাদের কী বললে?’

আবু মুসা (রাঃ) বললেন, ‘আমি কিছু বলিনি। বরং আমি আপনার মতামতের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।’

তখন ইবন মাসউদ (রাঃ) বললেন, ‘হায়! যদি তুমি তাদেরকে তাদের পাপগুলো গণনা করতে বলতে! আমি নিশ্চিত যে তাদের নেক আমল নষ্ট হবে না!’

এরপর আমরা তার সাথে গেলাম যতক্ষণ না তিনি সেই দলের কাছে পৌঁছালেন এবং দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আমি তোমাদের কী করতে দেখছি?’

তারা বলল, ‘হে আবু আবদুর রহমান! আমরা এই কংকর দিয়ে তাকবীর, তাহলীল ও তাসবীহ গণনা করছি।’

তিনি বললেন, ‘তোমরা তোমাদের পাপগুলো গণনা করো! আমি নিশ্চিত যে তোমাদের নেক আমল নষ্ট হবে না। ওহে মুহাম্মদের উম্মাহ! কী দ্রুত তোমরা ধ্বংসের দিকে যাচ্ছ! তোমাদের নবীর সাহাবিগণ এখনো জীবিত আছেন, তার কাপড় এখনো নষ্ট হয়নি, তার পাত্র এখনো ভাঙেনি! আল্লাহর কসম! হয় তোমরা মুহাম্মদের (সাঃ) দ্বীন থেকে অধিক হিদায়াতপ্রাপ্ত, নয়তো তোমরা বিভ্রান্তির দরজা খুলে দিয়েছো!’

তারা বলল, ‘হে আবু আবদুর রহমান! আল্লাহর কসম, আমরা তো শুধু ভালো উদ্দেশ্যেই করছি!’

তিনি বললেন, ‘কত লোক আছে যারা ভালো চায় কিন্তু তা পায় না! নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের বলেছিলেন, “এক দল লোক কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে নামবে না (অর্থাৎ, তাদের অন্তরে পৌঁছাবে না)।” আল্লাহর কসম! আমি জানি না, সম্ভবত তাদের অধিকাংশ তোমাদের মধ্য থেকেই হবে।’

এরপর তিনি তাদের ছেড়ে চলে গেলেন।

আমর ইবন সালামাহ (রহ.) বলেন: “আমরা দেখেছি, নাহরাওয়ানের যুদ্ধে সেই দলের অধিকাংশই খারেজিদের দলে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল।”

হাদিসটি শাইখ সালীম আল-হিলালী (রহ.) ‘আল বিদআহ’ (২৬-২৯ পৃষ্ঠা) গ্রন্থে সহিহ বলেছেন।

এই হাদিস থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, ছোট বিদআত কখনো স্থির থাকে না, বরং ধীরে ধীরে তা বড় বিদআতে রূপ নেয় এবং মানুষকে চরম বিপথগামিতার দিকে নিয়ে যায়। এই ছোট ছোট বিদআতই পরে খারেজি, রাফিদি ও অন্যান্য বিভ্রান্ত গোষ্ঠীর সৃষ্টি করেছে। তাই আমাদের উচিত প্রতিটি বিদআত থেকে সতর্ক থাকা এবং দ্বীনের নামে কোনো নতুন আমল চালু না করা, যা রাসুল (সাঃ) এবং সাহাবারা করেননি।

“বিদআত প্রত্যাখ্যান করো, কারণ প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা।” (সহিহ মুসলিম: ৮৬৭)