সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর, যিনি সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক রাসূলের ওপর.
সম্প্রতি (2013) এক সাক্ষাৎকারে ইয়াসির ক্বাধি দাবি করেছেন যে সালাফি ইসলাম তার জন্য যথেষ্ট “বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে উদ্দীপক” নয় এবং “সালাফি আন্দোলন” (সালাফিয়্যাহ) আধুনিক সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে সক্ষম নয়। এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ সিরিজে ইয়াসির ক্বাধির বক্তব্যের প্রভাব সম্পর্কে কিছু পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
ইয়াসির ক্বাধি তার সাক্ষাৎকারের শুরুতে বলেছেন:
“আমি মনে করি, ২০ বছর আগে যখন আমি একজন কিশোর ছিলাম, তখন আমি নিশ্চিতভাবে নিজেকে একজন সালাফি মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতাম। তবে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে আমি ধীরে ধীরে এই আন্দোলন থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমি দেখেছি যে এই আন্দোলন আমার প্রত্যাশার মতো বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে উদ্দীপক নয়। আমি মনে করি, এটি আধুনিক সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে সক্ষম নয়। এটি কিছু ধারণার প্রতি অত্যন্ত কঠোর, এবং এর ব্যাখ্যার সঙ্গে দ্বিমত পোষণকারীদের প্রতি অত্যন্ত শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে। ফলে, আমি সালাফি আন্দোলনের সাথে সম্পর্কিত অনেক পদ্ধতিগত বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করি।”
ইয়াসির ক্বাধি খুব ভালো করেই জানেন যে “সালাফিয়্যাহ"ই ইসলামের দ্বীন এবং ইসলামের দ্বীনই “সালাফিয়্যাহ।” কারণ তিনি মদীনার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দশ বছর অতিবাহিত করেছেন, যেখানে তিনি অনেক বিশিষ্ট সালাফি আলেমদের কাছ থেকে শুনেছেন যে সালাফিয়্যাহ হলো সেই ইসলাম যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। সালাফি দাওয়াত হলো সেই ইসলামের দিকে আহ্বান যা মানবজাতির সকল সমস্যার প্রকৃত সমাধান দেয়। এটি ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ)-এর বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত: “এই উম্মতের পরবর্তী অংশ শুধুমাত্র সেই উপায়েই সংশোধিত হবে, যেভাবে এর প্রথম অংশ সংশোধিত হয়েছিল।”
ইয়াসির কাদির সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রথম ও প্রধান সমস্যা হলো মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে অপমান করা কেনোনা আল্লাহ বলেন “আর যে নিজেকে নির্বোধ করেছে সে ছাড়া ইব্রাহীম এর মিল্লাত হতে আর কে বিমুখ হবে ! দুনিয়াতে তাকে আমরা মনোনীত করেছি; আর আখেরাতেও তিনি অবশ্যই সৎ কর্মশীলদের অন্যতম (সূরা আল-বাকারা ২:১৩০)” যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদতের মাধ্যমে এবং আল্লাহ (এবং তাঁর নাম ও গুণাবলী) সম্পর্কে অজ্ঞতা, প্রবৃত্তি, মতামত ও ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী কথা বলার মাধ্যমে ঘটে। যখন এই বিষয়গুলোর সংশোধন করা হয়, তখনই বান্দার সংশোধনের ভিত্তি স্থাপিত হয়, যা ইসলামের (সালাফিয়্যাহর) মূলনীতি (উসূল) ও পদ্ধতিগুলোর (মনাহিজ) ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ইয়াসির ক্বাধি এই সালাফি দৃষ্টিভঙ্গিকে তার জন্য “বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে উদ্দীপক নয়” বলে মনে করেন।
আমরা ইনশাআল্লাহ পরবর্তীতে এই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করব এবং প্রমাণ করব যে হিকমাহ (প্রজ্ঞা) ও আকল (বুদ্ধি) বিশুদ্ধ ইসলামে (সালাফিয়্যাহ) নিহিত, আর জুলুম (অন্যায়), জাহল (অজ্ঞতা) এবং প্রবৃত্তি অনুসরণ হলো সেই অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি সালাফিয়্যাহ থেকে সরে গেলে পতিত হয়।
আমরা ইয়াসির ক্বাধির নিম্নলিখিত বক্তব্য ও কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে তা স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করব:
- মিসরের বিপ্লব নিয়ে তার বক্তব্য
- জাহমিয়্যাহ কবরপূজকদের সাথে তার চুক্তি
- সালাফি আলেমদের সম্পর্কে তার বক্তব্য
- বিবর্তন (evolution) বিষয়ে তার মন্তব্য
এই পর্যালোচনার মাধ্যমে আমরা দেখাব যে হিকমাহ ও আকল সালাফি আলেমদের সাথেই আছে, কারণ বিশুদ্ধ বুদ্ধি কখনো সালাফি পথে (সালাফিয়্যাহ) বিরোধিতা করে না। সালাফি আলেমরা সর্বদা ওহীর (আল্লাহর বাণীর) দ্বারা সমর্থিত, যা ঈমান ও পদ্ধতির দিক থেকে বান্দা ও সমাজ সংশোধনের জন্য যথেষ্ট।
অন্যদিকে, ইয়াসির ক্বাধির ফিকর (চিন্তাধারা) ও রায় (মতামত) জুলুম, জাহল হওয়ার শামিল। যদিও তা “বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্দীপনা” নামে প্রচারিত হয়।
যারা বলেন যে ইয়াসির ক্বাধি সালাফিয়্যাহ (একটি পথ হিসেবে) ও সালাফি ব্যক্তিদের (যারা এই পথে রয়েছে) মধ্যে পার্থক্য করেন, তাদের জানা উচিত যে বিগত বছরগুলোতে করা তার করা বিভিন্ন মন্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে এটি তার প্রকৃত উদ্দেশ্য নয়। তার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে তিনি বর্তমান সালাফি আলেমদের আধুনিক সমস্যাগুলোর সমাধানে যথেষ্ট উপযুক্ত মনে করেন না, বরং তার সমালোচনার লক্ষ্য হলো মূলত সেই মূলনীতি (উসূল) যা কিতাব ও সুন্নাহ থেকে সালাফে সালিহীনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী উদ্ভূত হয়েছে।
এটি আরও দুঃখের বিষয় যে ইয়াসির ক্বাধির বক্তব্যের ফলে, তার অনুসারীদের মধ্যে কয়েকজন ভয়ংকর মন্তব্য করেছে যা বড় কুফরের পর্যায়ে পড়ে - আল্লাহ তাদের সঠিক বোধে ফিরিয়ে আনুন - যেমন একজন টুইটারে লিখেছে যে সালাফিয়্যাহ, “…মনে হয় সবচেয়ে নির্বোধ নিয়েন্ডারথালদের (আদিম বিকৃত মানুষ) আকৃষ্ট করে।”
এটি সম্পূর্ণ সালাফ জাতির বিরুদ্ধে একটি গালি, যা শুরু হয় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবাদের থেকে, এরপর তাবিঈন, তারপর ইমাম মালিক ও ইমাম আহমাদসহ ৩য় হিজরী শতাব্দীর বিশিষ্ট আলেমদের পর্যন্ত, এবং এরপর যারা সালাফের পথে অটল ছিলেন, যেমন ইবনে তাইমিয়্যাহ, ইবনে আল-কাইয়্যিম, ইবনে আবদুল ওয়াহহাব, ইবনে বাজ, আল-আলবানী এবং শত শত অন্যান্য আলেম।
কারণ সালাফিয়্যাহ (বিশুদ্ধ ইসলাম বিশ্বাস, কথা ও কর্মের দিক থেকে) সমস্ত নবী ও রাসূলদের ধর্ম এবং যারা সেই নবীর বিশুদ্ধ ইসলামকে আঁকড়ে ধরে, কথায়, বিশ্বাসে ও কর্মে, যখন অন্যরা সেই পথ থেকে বিচ্যুত হয়, সে ব্যক্তি “সালাফি” নামে পরিচিত হয়। এর অর্থ হলো তিনি সেই নবীর অনুসারী এবং তার কাছের সাহাবাদের অনুগামী, যারা সেই নবীর পথ আঁকড়ে ধরেছিল।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:“যে ব্যক্তি সালাফদের মাযহাব প্রকাশ করে এবং এর সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে, তার কোনো দোষ নেই, বরং তার কাছ থেকে তা গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক, সর্বসম্মতিক্রমে। কারণ সালাফদের মাযহাবই কেবল সত্য।”
ইয়াসির ক্বাধি এ সম্পর্কে অজ্ঞতার দাবি করতে পারে না, কারণ তিনি জানেন যে সালাফিয়্যাহই বিশুদ্ধ ইসলাম।
এটি এমন একটি বিষয় নয় যেখানে আমাদের অসংখ্য সালাফি আলেমের বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে এটি প্রমাণের জন্য। বরং এটি এমন একটি সুস্পষ্ট সত্য যা যুগে যুগে কিতাব ও সুন্নাহর উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।
এটি বিবেচনায় নিয়ে, ইয়াসির ক্বাধি এবং তার অনুসারীরা, যারা “বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্দীপনা” এবং “সবচেয়ে নির্বোধ নিয়েন্ডারথাল” জাতীয় মন্তব্য করেছে, তারা বড় ধরনের কুফরে ঝুঁকিতে পড়েছে—কারণ দ্বীনকে উপহাস ও অবজ্ঞা করা বড় কুফর। তবে আমরা তাদের ইসলাম থেকে বের করে দিচ্ছি না। আমাদের মূলনীতি অনুযায়ী, কেউ যদি বড় কুফরের কোনো কাজে লিপ্ত হয়, তবুও সে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায় না—কারণ কিছু শর্ত ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যা বিচার করা প্রয়োজন।
তবু আমরা শুধু এই বক্তব্যগুলোর ভয়াবহতা তুলে ধরছি। এগুলো মূলত বিশুদ্ধ ইসলামের (সালাফিয়্যাহর) প্রতি অবজ্ঞা ও উপহাসের শামিল। তবে ইয়াসির ক্বাধির “বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্দীপনা” সম্পর্কিত মন্তব্যটি বেশি অহংকারপ্রসূত এবং উপহাসেরও শামিল।
এটি যেন এই কথার সমান যে, ইসলামের মূলনীতি (উসুল) ও পদ্ধতিগুলো (মানহাজ) যথেষ্ট বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে উদ্দীপনামূলক নয় এবং আধুনিক সমস্যার সমাধান দিতে অক্ষম।
তিনি এমনটা বুঝাচ্ছেন যেন তিনি নিজে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে উচ্চতর চিন্তাবিদ, এবং তার *“ফিকর” (চিন্তা) ও “রায়” (মতামত)-এর মাধ্যমে আধুনিক সমস্যার সমাধান দিতে পারেন, যা ইসলামের মহান আলেমগণ যেমন:
- ইমাম আল-আলবানী
- ইমাম ইবনু বাজ
- ইমাম ইবনু উছাইমীন
- শাইখ সালিহ আল-ফাওযান ইত্যাদির পক্ষে সম্ভব নয়!
কারণ তারা নাকি ইয়াসির ক্বাধির মতো “বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে উত্তম” নন, এবং তারা কেবল সালাফি দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে কুরআন-সুন্নাহ থেকে মূলনীতি ও দিকনির্দেশনা দিতে পারেন, কিন্তু আধুনিক সমস্যার জন্য উপযুক্ত কিছু দিতে পারবেন না! এটি কেবল অহংকারই নয়, বরং দ্বীনকে হেয় প্রতিপন্ন করার একটি সুস্পষ্ট প্রচেষ্টা।
তিনি যখন জাহমিয়াদের, কবরপূজারীদের এবং শিরককে জনসম্মুখে আহ্বানকারীদের (যেমন হাবীব আলী আল-জিফরী) সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের কারণ ব্যাখ্যা করছিলেন, তখন তিনি লিখেছেন:
"...আমি নিজেই যখন বিগত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমা পরিস্থিতির সরাসরি অভিজ্ঞতা অর্জন করে আমার নিজস্ব মতামত পরিবর্তন করেছি, এবং আমি নিজেও পশ্চিমা প্রেক্ষাপট থেকে এসেছি, তাহলে আমি কীভাবে আশা করতে পারি যে এমন একজন আলেম, যিনি তার পুরো জীবন ভারত বা সৌদি আরবে কাটিয়েছেন, তিনি আমাদের পরিস্থিতি বুঝবেন? কখনও কখনও আমরা আমাদের উলামাদের এমন একটি স্তরে তুলে ধরি যা তারা আসলে পাওয়ার যোগ্য নন, এবং এটি একটি বাস্তবতা যা স্পষ্টভাবে বলা প্রয়োজন..."ইয়াসির ক্বাধির এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সালাফি উলামাদের জ্ঞানের মর্যাদা খাটো করেছেন এবং তাদের উপেক্ষা করেছেন, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তিনি নিজেই দশ বছর মদিনায় পড়াশোনা করেছেন এবং জানেন যে সালাফিয়্যাহই বিশুদ্ধ ইসলাম, তবু তার এই বক্তব্য উলামাদের ছোট করার শামিল। তারপর আসছে আকল (বুদ্ধি) এবং তার ব্যবহার: ইয়াসির ক্বাধি এবং তার অনুসারীরা যে "বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্দীপনা" বা আকলের কথা বলছেন, তা সালাফি উলামাদের ব্যাখ্যায় আকলের প্রকৃত সংজ্ঞার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ➡ সালাফি উলামারা ব্যাখ্যা করেছেন যে আকল মানে হলো: - কুরআন-সুন্নাহর আলোকে চিন্তা করা। - আল্লাহ ও রাসূল (ﷺ)-এর বিধান অনুযায়ী আধুনিক সমস্যার সমাধান খোঁজা, নিজস্ব রায় ও মনগড়া চিন্তা দিয়ে নয়।
কিন্তু ইয়াসির ক্বাধি যে আকলের কথা বলছেন, তা হলো:
- পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামকে ব্যাখ্যা করা।
- ইসলামের মূলনীতি ও উলামাদের ব্যাখ্যা অপর্যাপ্ত দাবি করা।
এই দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামের বিশুদ্ধ আকিদা ও সালাফিয়্যাহর সাথে সাংঘর্ষিক। ইসলামের প্রকৃত আকল হল ওহীর ভিত্তিতে চিন্তা করা, ব্যক্তিগত রায় ও পশ্চিমা দর্শনের সাথে আপস করা নয়।