আগামীকাল (এপ্রিল ১১, ২০২৫) বিশাল বিক্ষোভ। অনেকেই এখন দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিচ্ছেন, ন্যায়বিচারের দাবি জানাতে। কিছু ইসলামি বক্তাও মানুষকে রাস্তায় নামতে বলছেন। কিন্তু আমরা বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার আগে কিছু প্রশ্ন করা দরকার সেটা হল, আমরা ঠিক কার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি? এতে আসলে কী অর্জন হবে? আর এটা কি ইসলামের দেখানো পথ?
প্রথমেই স্পষ্ট করি, যদি আমাদের নিজস্ব সরকার ফিলিস্তিনের পক্ষে। তাহলে এই বিক্ষোভের টার্গেট কে? আমরা কি আকাশের দিকে চিৎকার করছি, আশা করছি আমেরিকা বা ইসরায়েল শুনবে? বাস্তবতা হলো, পশ্চিমা শক্তিগুলো যুগ যুগ ধরে বৈশ্বিক এসব লম্ফঝম্প বিক্ষোভকে উপেক্ষা করেছে। ইরাক যুদ্ধের সময় লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করেছিল, তাও যুদ্ধ থামেনি। উইঘুর মুসলিমদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কম হয়নি বিক্ষোভ। কিংবা মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বার্মিজ আর্মিদের কিংবা ইয়েমেন এর বছরের পর ধরে বোম্বিং, রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার এসবের বিরুদ্ধে হয়নি বিক্ষোভ? মুসলিম দেশগুলোর বিক্ষোভ তাদের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনে না। বরং, এইসব জমায়েত অনেক সময় বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয়, যার গাজার জন্য কোনো বাস্তব উপকার নেই। আল্লাহ বলেন: “আর যারা জালিমদের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাদের আগুন স্পর্শ করবে।” (সূরা হূদ, ১১:১১৩)। যদি এই বিক্ষোভে মুনাফিক, নাস্তিক বা বিশৃঙ্খলাকারীরা মিশে যায়, তাহলে আমরা উপকারের বদলে ক্ষতির সাথে যুক্ত হই। ঠিক তেমনটাই কি হয়নি? আমরা তো কয়েকদিন আগেই একটা বিক্ষোভ করলাম। কী লাভ হলো? গাজার লোকজন কি সাহায্য পেল? বোমা বর্ষণ কি থামল? বরং দেখলাম, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, দোকানপাট ভাঙচুর, সবকিছু বিশৃঙ্খলায় পরিণত হলো ন্যায়বিচারের নামে। হ্যাঁ, আমি জানি বেশিরভাগ মানুষ ভালো নিয়তে গিয়েছিল, কিন্তু এটাই হয় যখন আপনি সত্যিকারের মুমিনদের সাথে বিশৃঙ্খলাকারীদের মিশিয়ে ফেলেন। ফলাফল? ফিতনা, উপকার নয়।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কখনও রোমান বা কুরাইশদের বিরুদ্ধে মিছিল করেননি । তিনি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। যখন মক্কায় মুসলমানদের উপর নির্যাতন চলছিল, তিনি লোক জড়ো করে স্লোগান দেননি; বরং তিনি মদীনায় হিজরত করেন, শক্তি গড়ে তোলেন, পরে শক্তির ভিত্তিতে চুক্তি করেন। আবেগী স্লোগান বা র্যালি ক্ষুধার্তকে খাওয়ায় না, আহতকে সুস্থ করে না, বোমা থামায় না। আসল সাহায্য আসে দোয়া, দান এবং কৌশলগত পদক্ষেপ থেকে। শেষত, এটা কি ইসলামী পন্থা? ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় জুলুমের বিরুদ্ধে হিকমাহ (জ্ঞান ও প্রজ্ঞা) দিয়ে কাজ করতে, কেবল আবেগ দিয়ে নয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রাজাদের চিঠি পাঠিয়েছেন, শত্রুদের অর্থনৈতিকভাবে বয়কট করেছেন, এবং যখন প্রয়োজন হয়েছে তখনই যুদ্ধ করেছেন। তিনি কখনো ফাঁকা শব্দে সময় নষ্ট করেননি। ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহ.) বলেন: “যদি কোনো প্রতিবাদে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়, তবে তা হারাম, যদিও তার উদ্দেশ্য হয় জুলুম প্রতিরোধ।” সুতরাং বিশৃঙ্খল বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার বদলে আমাদের উচিত দোয়া বাড়ানো , ইসরায়েলি পণ্য বর্জন, গাজায় টাকা পাঠানো, এবং মুসলিমদের প্রকৃত ইসলামি সমাধান সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া। কিন্তু আমাদের নামাজের কথা বললে আমরা তেলে বেগুনে জ্বলে যাই।
ভাই ও বোনেরা, গাজার প্রতি আমাদের ভালোবাসা যেন শুধু আবেগ না হয়।তা যেন কার্যকর পদক্ষেপে রূপ নেয়। চলুন এমন কিছু করি যা বাস্তবেই উপকার করে: দোয়া, দান, সিস্টেমেটিক বয়কট, ও মুসলিম উম্মাহর শক্তি গড়ে তোলা। আল্লাহ যেন ফিলিস্তিনকে মুক্ত করেন এবং আমাদের সঠিকভাবে কাজ করার হিকমাহ দান করেন। আমীন।