ইসলামকিউএ প্রশ্ন নাম্বার : ১৭১১৪১
প্রশ্ন: আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসটি কি সহীহ যাতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : খুরাসানের দিক হতে কালো পতাকাবাহীগণ আবির্ভূত হবে (মাহদীর সমর্থনে)। অবশেষে সেগুলো ইলিয়া (বাইতুল মাকদিস)-এ স্থাপিত হবে এবং কোন কিছুই তা ফিরাতে পারবে না । হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম তিরমিযী । যদি হাদীসটি সহীহ হয় তাহলে খুরাসান কোথায়? আল্লাহ আপনাকে উত্তম পুরস্কার দান করুন ।
উত্তর:
যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর ।
প্রশ্নে উল্লেখিত হাদিসটি মহান সাহাবী আবু হুরাইরা (রা:) আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি (সা:) বলেছেন :
“খুরাসান থেকে কালো পতাকা বহনকারী একটি দল আত্মপ্রকাশ করবে, যাদেরকে কিছুই ঠেকাতে পারবে না যতক্ষণ না তারা ইলিয়া (বাইতুল মাকদিস)-তে তাদের পতাকা স্থাপন করে।”
হাদিসটি, নুয়াইম ইবনে হান্মাদ তার আল ফিতানে (১/২১৩) ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে ( ১৪/৩৮৩) তিরমিযী আস সুনানে (২২৬৯) আত তাবারানী আল মু’জাম আল আওসাতে ( ৪/৩১) আল বাইহাকী দালায়েল আল নুবুআতে (৬/৫১৬) এবং ইবনে আসাকির তার তারিখে দিমাশকে (৩২/২৮১) এ বর্ণনা করেছেন।
তাঁরা সকলেই এই হাদীসটি একই সনদে বর্ণনা করেছেন: রিশদীন ইবন সা‘দ → ইউনুস → ইবন শিহাব আয-যুহরী → কুবায়সাহ ইবন যুবায়ব → আবূ হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু), এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে সংযুক্ত করেছেন।
ইমাম আত-তাবারানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: “এই হাদীসটি ইবন শিহাব আয-জুহরী থেকে শুধুমাত্র ইউনুস বর্ণনা করেছেন, এবং ইউনুস থেকে শুধুমাত্র রিশদীন ইবন সা‘দ একাই এটি বর্ণনা করেছেন
ইমাম বাইহাকী (র:) বলেন : ইউনুস ইবনে ইয়াযীদ থেকে শুধুমাত্র রিশদীন ইবন সা‘দ এটি বর্ণনা করেছেন।
এই রিশদীন ইবনে সা’দের এর কারনেই হাদিসটি যয়ীফ (দুর্বল) ও মুনকার। তাকে আহমাদ বিন হাম্বাল দুর্বল বলেছেন। ইয়াহইয়া ইবনে মাইন তার সম্পরকে বলেন: তার হাদিস লেখা হবে না। আবু যারআ বলেন: তার হাদিস দুর্বল। আবু হাতিম বলেন: তার হাদিস মুনকার সে গাফিল, সে সিকাহ রাবি থেকে মুনকার হাদিস বর্ণনা করতো এবং তার হাদিস যইফ। ইমাম নাসাঈ বলেন তার হাদিস অগ্রহণযোগ্য। ইমাম আবু দাউদ বলেন: তার হাদিস দুর্বল । ইবনে হিব্বান বলেন: তার হাদিস বেশিরভাগ সময় মুনকার । দেখুন (তাহযীবুত তাহযীব ৩/২৭৮)
সারসংক্ষেপ হলো : হাদীসটি সহীহ নয় বরং খুবই দুর্বল । একমাত্র রিশদীন ইবন সা‘দ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এইজন্য ইমামগন হাদীসটি গ্রহণ করেননি ।
ইমাম তিরমিযী বলেন: হাদীসটি গরীব (অর্থাৎ তিনি হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন ।
ইমাম বাইহাকি বলেন: একই অর্থে কাব বিন আহ’বার থেকে একটি বর্ণনা আছে ।
এমনকি হাফেজ ইবনে কাসির যখন কালো পতাকা সম্পর্কিত একাধিক হাদিস উল্লেখ করেন তখন তিনি বলেন: এর সবই একটা মানুষকে হাদীসগুলোর সহীহ হওয়া নিয়ে সন্ধেহ তৈরি করে , কারণ এই হাদিসগুলোর কোনটার সনদ ত্রুটিমুক্ত নয় । (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৬/২৪৮)
এই হাদীসটিকে ইবনে হাজার তার আল কাউলুল মুসাদ্দাদ (৪২) , আলবানি তার সিলসিলা আদ দুয়াফায়ে ও আহমদ শাকির তার মুসনাদ আহমেদের তাহক্বীকে দুর্বল বলেছেন । মুসনাদ আহমাদের (মুআসসাসাত আর-রিসালাহ সংস্করণ) ব্যাখ্যাকারীরাও বলেছেন:
হাদীসটির সনদ খুবই দুর্বল , এমনকি তারা আরও বলেন:
“এই বিষয়টি সম্পর্কে কোনো সহীহ হাদীস নেই; কেবল দুর্বল এবং মাওকূফ (অর্থাৎ, সনদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছে না) রেওয়ায়াতগুলোই আছে।”
একইভাবে, শাইখ ড. হাতিম আশ-শারীফ বলেন: “কালো পতাকার ব্যাপারে কোনো সহীহ মারফু হাদীস নেই, এবং এমন কোনো হাদীসও নেই যার সনদ সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) পর্যন্ত পৌঁছে। (বক্তব্যটি একটি হাদীস বিষয়ক গবেষণাপত্র থেকে নেওয়া হয়েছে, যা সর্বপ্রথম ইসলাম টুডে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়, এরপর তা “মুলতাকা আহলুল হাদীস”-এ পুনরায় প্রকাশিত হয়।)
এই বিষয়ে বর্ণিত হাদীসগুলোর সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আগ্রহীরা উপরের উল্লেখিত গবেষণাপত্রটি দেখতে পারেন।
যাহোক , হাফিজ ইবনে কাসীর (র:) বলেন যদিও আমরা হাদীসটিকে সহীহ হিসেবে ধরে নি , তাহলে এই কালো পতাকাগুলি সেগুলি নয় যেগুলোর সাথে আবু মুসলিম আল-খুরাসানী এসেছিলেন এবং ১৩২ হিজরীতে উমাইয়া খেলাফতকে উতখাত করেছিলেন; বরং এটি অন্য পতকার দিকে ইঙ্গিত করে যার ব্যানারে ইমাম মাহদী আসবেন । (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১৯/৬২)
এটি লক্ষ্য করা উচিত যে, খুরাসান একটি বৃহৎ অঞ্চল, যা ইরানের উত্তর-পূর্ব অংশকে অন্তর্ভুক্ত করে । একদিকে এটি জারজান এবং তাবারিস্তান থেকে শুরু হয়ে, অন্যদিকে ট্রান্সোকসিয়ানা পর্যন্ত বিস্তৃত। রাজনৈতিকভাবে, এটি ট্রান্সোকসিয়ানা এবং সিজিস্তানকে(বর্তমানে আফগানিস্তান) অন্তর্ভুক্ত করে।বর্তমানে যা খুরাসান নামে পরিচিত, তা ঐতিহাসিক খুরাসানের অর্ধেকেরও কম। বাকি অংশ বর্তমানে আফগানিস্তানের অন্তর্ভুক্ত। (তারিফ বিল আলম আল ওয়ারিদা ফিল বিদায়া ওয়ান নিহায়া লি ইবনে কাসীর ১/৪৭১)
والله أعلم