একজন জালিম ও প্রতারক ইমামের পেছনে নামাজ পড়ার বিধান

Posted by Shamil Basaiv on Monday, March 17, 2025

প্রশ্ন: একজন জালিম ও প্রতারক ইমামের পেছনে নামাজ পড়া বৈধ কি না, যদিও তাদের কেউ কেউ কুরআন সুন্দরভাবে তিলাওয়াত করতে পারে? আমাদের দিশা দিন, আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।

উত্তর: যদি কোনো ইমাম জাদুকর হয়, গায়েবের (অদৃশ্য) জ্ঞান দাবি করে, কুসংস্কার ও শরীয়তবিরোধী কাজ করে, তাহলে তাকে ইমাম বানানো এবং তার পেছনে নামাজ পড়া বৈধ নয়। কারণ, যে ব্যক্তি গায়েবের জ্ঞান দাবি করে, সে কুফরি করে। আমরা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাই। আল্লাহ বলেন: “বলুন, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া কেউ গায়েবের জ্ঞান রাখে না।” (সূরা আন-নামল: ৬৫) যে ব্যক্তি জাদু চর্চা করে, তাকে কাফের গণ্য করা হয়, কারণ আল্লাহ বলেন:

وَٱتَّبَعُوا۟ مَا تَتْلُوا۟ ٱلشَّيَٰطِينُ عَلَىٰ مُلْكِ سُلَيْمَٰنَۖ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَٰنُ وَلَٰكِنَّ ٱلشَّيَٰطِينَ كَفَرُوا۟ يُعَلِّمُونَ ٱلنَّاسَ ٱلسِّحْرَ وَمَآ أُنزِلَ عَلَى ٱلْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَٰرُوتَ وَمَٰرُوتَۚ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَآ إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْۖ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِۦ بَيْنَ ٱلْمَرْءِ وَزَوْجِهِۦۚ وَمَا هُم بِضَآرِّينَ بِهِۦ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ ٱللَّهِۚ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنفَعُهُمْۚ وَلَقَدْ عَلِمُوا۟ لَمَنِ ٱشْتَرَىٰهُ مَا لَهُۥ فِى ٱلْءَاخِرَةِ مِنْ خَلَٰقٍۚ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْا۟ بِهِۦٓ أَنفُسَهُمْۚ لَوْ كَانُوا۟ يَعْلَمُونَ

আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত। আর সুলাইমান কুফরী করেনি; বরং শয়তানরা কুফরী করেছে। তারা মানুষকে যাদু শেখাত এবং (তারা অনুসরণ করেছে) যা নাযিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই ফেরেশতা হারূত ও মারূতের উপর। আর তারা কাউকে শেখাত না যে পর্যন্ত না বলত যে, ‘আমরা তো পরীক্ষা, সুতরাং তোমরা কুফরী করো না। এরপরও তারা এদের কাছ থেকে শিখত, যার মাধ্যমে তারা পুরুষ ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত। অথচ তারা তার মাধ্যমে কারো কোন ক্ষতি করতে পারত না আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। আর তারা শিখত যা তাদের ক্ষতি করত, তাদের উপকার করত না এবং তারা অবশ্যই জানত যে, যে ব্যক্তি তা ক্রয় করবে, আখিরাতে তার কোন অংশ থাকবে না। আর তা নিশ্চিতরূপে কতই-না মন্দ, যার বিনিময়ে তারা নিজদেরকে বিক্রয় করেছে। যদি তারা জানত। (সূরা বাকারা -১০২)

কিন্তু যদি কারও কিছু পাপ থাকে, তবে সেটা কুফরি পর্যায়ে না যায়, যেমন: জাদু করা বা গায়েবের জ্ঞান দাবি করা ব্যতীত সাধারণ গুনাহ হয়ে থাকে, তাহলে তার পেছনে নামাজ পড়া সহীহ হবে। তবে উত্তম হচ্ছে ধার্মিক ও ন্যায়পরায়ণ ইমামের অনুসরণ করা। এটি ধর্মের জন্য সাবধানতা। ও সেইসব আলেমদের মতের বাইরে থাকা ভালো, যারা বলেন যে, গুনাহগার ব্যক্তির পেছনে নামাজ পড়া বৈধ নয়।

পাপী ব্যক্তিদের ইমাম বানানো উচিত নয়, তবে যদি পরিস্থিতির কারণে এমন ইমামের পেছনে নামাজ পড়তে হয়, তাহলে নামাজ শুদ্ধ হবে, কারণ মানুষ এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে পারে এবং বিকল্প নাও পেতে পারে।

কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যকে ডাকবে, মৃত ব্যক্তিদের কাছে সাহায্য চাইবে বা তাদের কাছে প্রার্থনা করবে, তার পেছনে নামাজ পড়া বৈধ নয়। কারণ, এটি তাকে কাফেরদের কাতারে ফেলে দেয়। এটি সেই মুশরিকদের কাজ, যাদের বিরুদ্ধে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা ও অন্যান্য স্থানে যুদ্ধ করেছেন।

আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি মুসলমানদের অবস্থার সংশোধন করেন, তাদের ধর্মের সঠিক জ্ঞান দান করেন এবং তাদের মধ্যে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

[মাজমূ ফাতাওয়া ওয়ামাকালাত আশ-শায়খ ইবন বাজ (৯/২৭৮)]